সহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সাংবাদিকতা পদক 

ফেরদৌস ওনুঃ
আজ ২ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বেলা এগারোটায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নারী সাংবাদিকদের পদক প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র’ র উদ্যোগে ২০১৭ হতে ও মহতী উদ্যোগের আয়োজন করা হয়ে আসছে প্রতি বছরে। তবে করোনা কালীন সময়ে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে গত দুই বছর আয়োজন স্থগিত ছিল। বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যের শুরুতেই শিলালিপি পত্রিকার সম্পাদক সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের একমাত্র সন্তান সুমন জাহিদের স্মৃতি স্মরণে বলেন ছেলেটিও এ দিনটি দেখে যেতে পারলো না। তিনি আরও বলেন- সেলিনা পারভীন ছিলেন মুক্তমনা, স্বনির্ভর, মেধাবী ও অত্যন্ত সাহসি এক কবি ও সাংবাদিক। এসময় তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান সেলিনা পারভীনের স্মারক গ্রন্থটি সংগ্রহে রেখে পাঠ করার জন্য। যাতে করে আজকের প্রজন্মও বুঝতে সক্ষম হয় সাংবাদিকতা সৎ সাহষ ও দেশপ্রেম না থাকলে সম্ভব নয়। নাসিমুন আরা দিপ্ত প্রত্যয়ে সাংবাদিক সহীদ সেলিনা পারভীনের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সকল সাংবাদিকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। পর্যায়ক্রমে বক্তব্য প্রদান করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাষ্টি এবং স্বনামধন্য বুদ্ধিজীবি মফিদুল হক বক্তব্যের শুরুতেই এদিনের পদক প্রদানের জুড়ীবোর্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি সহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনকে বৃত্ত ভাঙ্গার এক উত্তম দৃষ্টান্ত হিসেবে রাষ্ট্রে তার নজীর স্থাপন করেছেন বলে জানান। নানাবিধ পারিবারিক বলয় ভেঙে এবং কুসংস্কারের বৃত্তভেঙ্গে সে সময়ে তার পেশাদার স্থানটি তৈরি করেছেন তিনি নিজ যোগ্যতায়। আজও তার নিষ্ঠুরতর হত্যাকান্ডের কথা স্মরণ করলে গাঁ শিউরে ওঠে। সকল জাতীয় পর্যায়ের দিবসগুলোয় এবং আন্দোলন সংগ্রামে মোটরসাইকেল চালিয়ে অংশ গ্রহণ করতেন সেলিনা পারভীন। তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সকল সাংবাদিকদের আরও বৃহৎ পরিসরে তাকে জাগ্রত রাখার আহবান জানান। অধ্যাপক মাহফুজা খানম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডাকসু সহ-সভাপতি সাংবাদিক সেলিনার স্মৃতি হাতরে বলেন আমরা আজও তাকে উৎস করে উজ্জীবিত হই। তার প্রতি শ্রদ্ধা ও নারী সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা নিবেদন করে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রকে সাধুবাদ জানান। নারী যুগে যুগে তাদের মেধা,শ্রম, সময়ের সাথে লড়াই করে সাংবাদিক পেশায় চ্যালেন্জের মোকাবিলা করে স্ব স্ব জায়গা করে নিয়েছেন। ৭০ দশকে কর্মনিষ্ঠা, সাংবাদিকতার প্রতি আকাঙ্খা, দায়িত্বশীলতা, সাহসিকতার ভিত্তিতে আজকের নারী সাংবাদিকদের জয়জয়কার তার মতো সাংবাদিকের হাত ধরেই। সাহসি সাংবাদিক হিসেবে এসময় মাহফুজা প্রথম আলোর জেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের কথা বলেন। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা থেকে মেধা-মনন ও বোধ জাগ্রত রেখে সাংবাদিক দায়িত্ব পালন করতে বলে তার মূল্যবান দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য শেষ করেন। সঞ্চালক মুনীমা সেলিনা পারভীনের ভাগ্নীকে বক্তব্য রাখতে বল্লে মেহেরুন্নেসা কঙ্কা সামস গ্লোবালের কর্ণধার খালার সাহসিকতা ও পেশার প্রতি শ্রদ্ধাকে স্মরণ করে বলেন এ পদক প্রদানের আর্থিক মানদণ্ড আরও উন্নত পরিসরে এবং শুধু ঢাকার মধ্যে সীমিত না থেকে ঢাকার বাইরের জেলা গুলোর সংবাদদাতাদের মধ্যেও সংযুক্ত করার অভিপ্রয়াস ব্যাক্ত করেন। সবশেষে আজকের পত্রিকার সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সালাম স্যার আয়োজকদের পদক্ষেপের প্রসংশা করে আরও ব্যাপকভাবে ও সুসংবদ্ধ ভাবে আয়োজন সফল করবেন বলে নারী সাংবাদিক সহ সকল সাংবাদিক পেশাজীবিদের প্রতি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন এ পদক অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠান শেষে ৭১’ টিভির ব্যাবসায়-বাণিজ্য রিপোর্টার কাবেরী মৈত্রেয় এবং প্রথম আলোর জেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে পদক প্রদানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন হয়।

Related posts

Leave a Comment